ডিপ্লোমা চাকুরি প্রস্তুতি ২ (ট্রান্সফরমার)
ট্রান্সফরমার
.....................................................................
১. একটি ট্রান্সফরমারের নেমপ্লেটে প্রদত্ত ভোল্টেজ ব্যতীত অন্য কোন ভোল্টেজে কি ট্রান্সফরমার চালানো যেতে পারে?
উত্তরঃ
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রান্সফরমার নেমপ্লেটে প্রদত্ত ভোল্টেজ অপেক্ষা কম ভোল্টেজে চালান যেতে পারে। যদি ট্যাপ প্রদান করা না হয়ে থাকে তাহলে ট্রান্সফরমার নেমপ্লেটে প্রদত্ত ভোল্টেজ অপেক্ষা বেশি ভোল্টেজে চালান উচিত নয়। যদি নির্ধারিত ভোল্টেজ অপেক্ষা কম ভোল্টেজে ট্রান্সফরমার চালান হয়, তাহলে এর KVA রেটিংও ক্রমান্বয়ে কমে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ভোল্টেজ ৪৮০ ভোল্ট ও সেকেন্ডারি ভোল্টেজ ২৪০ ভোল্ট হয়ে থাকে এবং এটি যদি ২৪০ ভোল্টে অপারেট করা হয় তাহলে সেকেন্ডারি ভোল্টেজ হ্রাস পেয়ে হবে ১২০ ভোল্ট। যদি ট্রান্সফরমারটির রেটিং ১০KVA হয়ে থাকে তাহলে সেটি হয়ে যাবে ৫ KVA অথবা প্রদত্ত ভোল্টেজের সমানুপাতিক হবে।
.
২. ট্রান্সফরমারের কর্মদক্ষতা বেশি হয়ে থাকে কেন?
উত্তরঃ
ট্রান্সফরমার একটি স্ট্যাটিক ডিভাইস অর্থাৎ স্থির যন্ত্র। এতে কোন ঘূর্ণায়মান অংশ নেই, ফলে ঘর্ষণজনিত কোন ক্ষয় বা লস এতে নেই। অন্যান্য ঘূর্ণায়মান যন্ত্রের তুলনায় ট্রান্সফরমারে লস অনেক কম। তাই ট্রান্সফরমারের কর্মদক্ষতা সবচাইতে বেশি। ট্রান্সফরমারের কর্মদক্ষতা ৯৫%-৯৮% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
.
৩. ট্রান্সফরমারের রেটিং kW এ না লিখে kVA লেখা হয়ে থাকে কেন?
উত্তরঃ
ট্রান্সফরমারের মোট লস= কোর লস + কপার লস। কোর লস নির্ভর করে ভোল্টেজ এর উপর এবং কপার লস নির্ভর করে কারেন্টের উপর, কিন্তু ট্রান্সফরমারের মোট লস কারেন্ট ও ভোল্টেজের মধ্যবর্তী ফেজ কোণের উপর নির্ভর করেনা। kW এর সাথে পাওয়ার ফ্যাক্টর বা কারেন্ট ও ভোল্টেজের মধ্যবর্তী ফেজ এঙ্গেল জড়িত কিন্ত kVA এর সাথে পাওয়ার ফ্যাক্টর থাকেনা। এজন্য ট্রান্সফরমারের রেটিং kW এ না লিখে kVA লেখা হয়ে থাকে।
.
৪. ট্রান্সফরমার ব্যাংকিং কাকে বলে?
উত্তরঃ
অনেক সময় ৩ ফেজ ট্রান্সফরমার ব্যবহার না করে তিনটি ১ ফেজ ট্রান্সফরমার এর সাহায্যে ৩ ফেজ সাপ্লাই দেয়া হয়, এই ব্যবস্থাকে ট্রান্সফরমার ব্যাংকিং বলে।
.
৫. ট্রান্সফরমার ব্যাংকিং করার শর্ত কি কি?
উত্তরঃ
ক) প্রতিটি ট্রান্সফরমার এর kVA রেটিং একই হতে হবে।
খ) প্রতিটি ট্রান্সফরমার এর ভোল্টেজ রেটিং একই হতে হবে।
গ) সঠিক পোলারিটি অনুযায়ী সংযোগ দিতে হবে।
.
৬. ট্রান্সফরমার ব্যাংকিং কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ
ট্রান্সফরমার ব্যাংকিং সাধারণত ৬ প্রকার হয়ে থাকে। যথাঃ-
1. স্টার-স্টার
2. ডেল্টা-ডেল্টা
3. স্টার-ডেল্টা
4. ডেল্টা-স্টার
5. ওপেন ডেল্টা অথবা (V-V)
6. T-T কানেকশন
.
৭. অটো ট্রান্সফরমার কি?
উত্তরঃ
অটো ট্রান্সফরমার এমন এক ব্যাতিক্রমি ট্রান্সফরমার যার মধ্যে কেবল একটি ওয়াইন্ডিং থাকে। ইহার কিছু অংশ প্রাইমারি আর কিছু অংশ সেকেন্ডারি, উভয় কয়েল ইলেকট্রিক্যাল ও ম্যাগনেটিক্যালি সংযুক্ত থাকে। তারপরও একে ট্রান্সফরমার বলা হয়, কারণ ইহার কার্যপ্রণালী দুই ওয়াইন্ডিং ট্রান্সফরমার এর মতই।
.
৮. অটো ট্রান্সফরমারের ব্যবহারগুলো কি কি?
উত্তরঃ
ক) ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে ভোল্টেজ ঘাটতি পুরনে ইহা ব্যবহার করা হয়।
খ) ৩-ফেজ ইন্ডাকশন মোটর চালু করার কাজে ব্যবহার হয়।
গ) রাজপথ আলোকিত করার কাজে ইহা ব্যবহার হয়।
ঘ) রেডিও ইলেক্ত্রনিক্সে ইহা ব্যবহার করা হয়।
.
৯. আইডিয়াল ট্রান্সফরমার কি?
উত্তরঃ
আইডিয়াল বা আদর্শ ট্রান্সফরমার বলতে এমন এক দরনের ট্রান্সফরমারকে বুঝায় যার মধ্যে কোন পাওয়ার লস নেই । অর্থাৎ ইনপুটে দেওয়া ১০০% পাওয়ার আউটপুটে পাওয়া যাবে। কিন্ত বাস্তবে এমন কোন মেশিন বা বস্ত নেই যার পাওয়ার লস থাকবে না। সব ধরনের মেশিনে পাওয়ার লস থাকে। কিন্তু ট্রান্সফরমারের পাওয়ার লস অনেক কম হয়ে থাকে।
.
১০. আইডিয়াল ট্রান্সফরমারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
উত্তরঃ
ক) ওয়াইন্ডিং এর রেজিস্ট্যান্স খুবই কম থাকবে।
খ) এতে কোন লিকেজ ফ্লাক্স থাকবে না।
গ) কোরে কোন প্রকার লস থাকবে না।
ঘ) কোরের পারমিয়েবিলিটি বা ভেদ্যতা খুবই উচ্চ মানের।
.
১১. একটি ট্রান্সফরমার স্টেপ আপ না স্টেপ ডাউন বুঝার উপায় কি?
উত্তরঃ
ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি সাইডের তুলনায় সেকেন্ডারি সাইডে যদি প্যাচ সংখ্যা বেশি থাকে তাহলে সেই ট্রান্সফরমার হলো স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার।
ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি সাইডের তুলনায় সেকেন্ডারি সাইডে যদি প্যাচ সংখ্যা কম থাকে তাহলে সেই ট্রান্সফরমার হলো স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার।
.
১২. লিকেজ ফ্লাক্স কি?
উত্তরঃ
প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কয়েলে যে ফ্লাক্স উৎপন্ন হয় তাকেই লিকেজ ফ্লাক্স বলা হয়ে থাকে। প্রাইমারি ফ্লাক্সের তুলনায় সেকেন্ডারিতে যদি ফ্লাক্স বেশি হয় সেক্ষেত্রে আউটপুটে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়।
.
১৩. ট্রান্সফরমারের কোর কি দিয়ে তৈরি?
উত্তরঃ
ট্রান্সফরমারের কোর সাধারণত সিলিকন স্টিল নামক এক ধরনের স্টিল দিয়ে তৈরি। ট্রন্সফরমারের কোরগুলো সাধারণত নরমাল স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে হয় না।
.
১৪. ট্রান্সফরমারের টেস্ট কেন করা হয়?
উত্তর:
আমরা জানি ট্রান্সফরমারের পারফরম্যান্স এর হিসাব সমতুল্য সার্কিটের উপর ভিত্তি করে করা হয়। সমতুল্য সার্কিট চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত। সমতুল্য
রেজিস্ট্যান্স R(01) বা R(02); সমতুল্য লিকেজ রিয়্যাক্ট্যান্স X(01) বা X(02); কোর লস রেজিস্ট্যান্স R(0); ম্যাগ্নেটাইজিং রিয়্যাক্ট্যান্স X(0) । এই ধ্রুবক গুলো ব্যবহার করে ট্রান্সফরমারের পারফরম্যান্স খুব সহজে বের করা যায়।
ট্রান্সফরমারের পারফরম্যান্স বের করার জন্যই টেস্ট হরা হয়।
.
১৫. ট্রান্সফরমারের ওপেন সার্কিট এবং শর্ট সার্কিট টেস্ট কেন করা হয়?
উত্তরঃ
ক) ওপেন সার্কিট টেস্ট >
এই টেস্ট করার সময় হাই সাইড ওপেন রাখতে হয় এবং লো ভোল্টেজ সাইড ইকুইপমেন্ট সংযুক্ত করা হয়। ওপেন সার্কিট টেস্ট যে কারনে করা হয়ঃ
1. নো লোড কারেন্ট নির্ণয়,
2. কোর লস নির্ণয়।
এই টেস্ট করার সময় রেটেড ভোল্টেজ সাপ্লাই দেওয়া হয়।
খ) শর্ট সার্কিট টেস্ট >
এই টেস্ট করার জন্য লো ভোল্টেজ সাইডকে শর্ট করতে হয়। শর্ট সার্কিট টেস্ট যে কারনে করা হয়ঃ
1. কপার লস নির্ণয়,
2. সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স নির্ণয়,
3. রিয়াক্ট্যান্স নির্ণয়,
4. ইম্পিড্যান্স নির্ণয়,
5. ইফিসিয়েন্সি নির্ণয়,
6. ভোল্টেজ রেগুলেশন নির্নয়।
.
১৬. নো-লোড অবস্থায় কারেন্টের পরিমান এত কম হয় কেন?
উত্তরঃ
নো-লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের প্রাইমারীতে কারেন্টের পরিমান খুব কম হয়ে থাকে কারন ট্রান্সফরমার ডিজাইন এর সময় এর ওয়াইন্ডিং এ প্রয়োজনীয় সংখ্যক টার্ন দেওয়া হয়। এর ফলে উচ্চমানের ইন্ডাক্টিভ সার্কিটে পরিণত হয়। এমন অবস্থায় যখন ভোল্টেজ আরোপিত হয় তখন সেলফ ইন্ডাকশনের কারনে কাউন্টার ইএমএফ তৈরি হয় এবং কারেন্টকে সীমিত রাখে। এই কারনে নো-লোড অবস্থায় কারেন্টের পরিমান এত কম হয়।
.
১৭. ভোল্টেজ রেগুলেশন বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ
ট্রান্সফরমারের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পেলে সেকেন্ডারিতে ভোল্টেজ কমে যায়। তাই নো লোড ভোল্টেজ হতে ফুল লোড ভোল্টেজ পর্যন্ত মোট ভোল্টেজ ড্রপকে ফুল লোড ভোল্টেজ দ্বারা ভাগ করলে ভোল্টেজ রেগুলেশন পাওয়া যায়। একে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
.
১৮. সার্কুলেশন কারেন্ট কি?
উত্তরঃ
প্যারালাল অপারেশনের সময় যদি উভয় ট্রান্সফরমারে ট্রান্সফরমেশন রেশিও এক না হয় তাহলে আমরা জানি ট্রন্সফরমারের ইন্ডিউসড সেকেন্ডারি ইএমএফ এর কম-বেশি বা অসমতা বিরাজ করে এবং সঠিকভাবে ফেজ বিপরীত বা অপজিশন হয় না যার ফলে লোড অবস্থায় এমনকি নো-লোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারের উভয় ওয়াইন্ডিং এর কিছু কারেন্ট আবর্তাকারে বা ঘূর্ণনাকারে প্রবাহিত হয়, ইহাই সার্কুলেশন কারেন্ট।
.
১৯. সার্কুলেশন কারেন্টের সমস্যা কি?
উত্তরঃ
1. অসম লোড বহনের প্রবনতা সৃষ্টি হয়।
2. এর ফলে পূর্ণভাবে KVA আউটপুট পাওয়া যায় না।
3. ট্রান্সফরমার অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।
.
২০. ট্রান্সফরমার কেন প্যারালালে সংযোগ করা হয়?
উত্তরঃ
অনেক সময় ট্রান্সফরমারকে অতিরিক্ত লোড বহন করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে। এই অবস্থায় দুই বা ততোধিক ট্রান্সফরমারকে প্যারালালে সংযোগ করতে হয়। প্যারালাল সার্কিটে সংযুক্ত করতে হলে নিচের শর্তগুলো পুরন করতে হয়।
1. সবগুলো ট্রান্সফরমার এর হাই এবং লো সাইডের ভোল্টেজ রেটিং একই হতে হবে অর্থাৎ ট্রান্সফরামার রেশিও একই হতে হবে।
2. ট্রান্সফরমার সমূহকে সঠিক পোলারিটি অনুযায়ী সংযোগ দিতে হবে।
3. প্রতিটি ট্রান্সফরমারের সমতুল্য ইম্পিডেন্স অবশ্যই KVA রেটিং এর উল্টানুপাতিক হতে হবে।
4. প্রতিটি ট্রান্সফরমারের নিজস্ব সমতুল্য
রেজিস্ট্যান্স এবং রিয়্যাক্ট্যান্স এর অনুপাত একই হতে হবে।
5. ফেজ সিকুয়েন্স অবশ্যই একই হতে হবে।
...
..
সংগ্রহে:
তাইফুর রহমান জাবেদ।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন